উখিয়া প্রতিনিধি ::
উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ স্থানিয় জনসাধারণ ও মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সুপেয় পানি ব্যবস্থাকরনের জন্য স্থাপিত ১ হাজার নলকুপের উপকারভোগিদের কাছ থেকে সরকারি খরচের নাম করে অর্ধ কোটি টাকা লোপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে উখিয়া উপজেলা উপ সহকারি প্রকৌশলী ইকবাল হোসাইন ও তার বিশাল সিন্ডিকেট অফিস খরচের নাম করে স্থানিয়দের মাঝে বরাদ্দ দেয়া ৫০০ নলকুপের কেয়ারটেকারের কাছ থেকে গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে বিভিন্নসূত্রে জানা গেছে। টাকা নেওয়ার কথা ¯ী^কার করেছেন অনেক উপকারভোগি। তবে অভিযুক্ত ইকবাল হোসাইন টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেছেন ‘আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র শত্রুতা করেছে এবং মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছে।’
জানা যায়, বল প্রয়োগে মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও স্থানিয় ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণের জন্য চলতি বছরের শুরুতে ১ হাজার নলকুপ স্থাপনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১ হাজার নলকুপের মধ্যে ৫শটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এবং অপর ৫শটি আশপাশের বিশেষ করে পালংখালী, রাজাপালং, জালিয়াপালং, হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্থানিয় সরকার বিভাগের দেওয়া উক্ত নলকুপ বসানোর সময় তালিকাভুক্তিতে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানিয় সরকার শাখা থেকে কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে পাঠানো পত্রে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে সেপ্টেম্বর ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমার থেকে আসা আশ্রিত রোহিঙ্গা এবং স্থানিয় ক্ষতিগ্রস্থ জনগনের জন্য বরাদ্দকৃত ১ হাজার গভীর ও অগভীর নলকুপের সহায়ক চাঁদা মওকুপ করা হয়। উপ সচিব মোঃ খাইরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নির্দেশনাপত্রটি উখিয়ায় ও প্রেরণ করা হয়। কিন্তু সরকারি নিদের্শনা উপেক্ষা করে উখিয়া উপজেলা উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ ইকবাল হোসাইন স্থানিয় ক্ষতিগ্রস্থ ৫শ উপকারভোগিদের কাছ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা অফিস খরচের নামে হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। ৫শ টি নলকুপের মধ্যে ইতোমধ্যে অনেক নলকুপ অকেজো হয়ে পড়েছে।
জালিয়াপালং হারাসিয়ার নুর নাহারের নামে বরাদ্দ পাওয়া নলকুপটি এখনো অকেজো। স্থানিয় উপকারভোগি মুফিজের অভিযোগ অফিসের চাহিদা অনুযায়ি টাকা দিয়েছি কিন্তু নলকুপটি এখনো চালু হয়নি।
হলদিয়ার চৌধুরী পাড়ার জেসমিন আক্তার জানান, নলকুপের জন্য সরকারি খরচের কথা বলে আমি সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিয়েছি। তবে নলকুপটি এখন চালু আছে।
পাতাবাড়ির মফজল মিয়া, ধুরুংখালীর দুলাল ধর , জালিয়াপালং এর আবুল বশর, চরপাড়ার আবদুর রহমান, সোনাইছড়ির রুজিনা আক্তার সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ১২/১৪ জন উপকারভোগির সাথে কথা বলে সরকারি খরচের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। টাকা নেওয়া অনেক কেয়ারটেকারের বক্তব্য পত্রিকা অফিসে কাছে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারি প্রকৌশলী মোঃ ইকবাল হোসাইন বলেন, আমি কারো কাছ থেকে কোন টাকা নেয়নি। আমার বিরুদ্ধে নিশ্চয় কোন ষড়যন্ত্র। টাকা গ্রহনের বিষয়টি তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, আমরা তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলায় পাঠিয়েছি । তারা কি পরিমান টাকা নিয়েছে তা জানিনা তবে কয়েকজন বলেছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা করে অফিস খরচ নিয়েছে।
কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ঋত্বিক চৌধুরী অনিয়ম ও প্রকল্পের বিষয়ে জানান, আমি আসার ( যোগদান করার) আগে উক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং বেশিরভাগ বাস্তবায়ন ও করা হয়। তবে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ আছে উক্ত প্রকল্প থেকে কোন খরচ নেওয়া যাবেনা। হোস্ট কমিউনিটি এমনিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সরাসরি মন্ত্রনালয় পত্রের মাধ্যমে সহায়ক চাঁদা মওকুপ করে দেয়। কোন কর্মকর্তা টাকা নিলে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযুক্ত উক্ত ইকবাল হোসেন বর্তমানে উখিয়া এবং টেকনাফ ২ উপজেলার দায়িত্বে থাকায় রোহিঙ্গা আগমনের পর থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে নানা অনিয়ম করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ একই উপজেলায় চাকুরি করার সুবাদে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করছে বলে অনেকের ধারনা। স্থানিয় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য দেওয়া নলকুপের বরাদ্দে উল্লেখিত অনিয়ম তদন্তের জন্য উর্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সুফলবঞ্চিতরা।
পাঠকের মতামত: